সংবাদচর্চা রিপোর্ট
পুরো সড়কটি ডুবে আছে ক্যামিকেল আর পয়োবর্জ্যমিশ্রিত নোংরা পানিতে। দুর্গন্ধযুক্ত ওই পানির রং কুচকুচে কালো। এলাকাবাসী জানান, সেই পানি মাড়িয়েই চলাচল করতে হচ্ছে দু’টি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা প্রত্যাশীদের। সমস্যাটি এক-দুই দিন কিংবা কয়েক মাসের নয়। টানা ছয় বছরের বেশি সময় ধরে চলছে শিল্প অধ্যষিত ফতুল্লার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সেহাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে। কুচকুচে কালো ওই পানি থেকে পরিত্রাণ পেতে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে গেছে স্থানীয়রা। জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ ‘নারায়ণগঞ্জস্থান’ এ কিছু ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
৯১ বছর পূর্বে ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেহাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬০ সালে। তখন থেকেই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দু’টি বিদ্যালয়েই আসা যাওয়ার জন্য সড়কটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ছিল।
মুখলেছুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, বিদ্যালয়ের আশপাশে বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানার ডাইং গড়ে উঠেছে। রাত হলেই সেই ডাইং গুলো থেকে ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি ছেড়ে দেয়। সেই পানি ড্রেন উপচে সড়কে উঠে থাকে ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, গত ৬ বছর যাবত সড়কটিতে এই পানি আটকে থাকছে। দু’বছর ধরে সমস্যা আরও প্রকট হয়ে প্রায় প্রতিদিনের সমস্যায় রূপ নিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত সরু। ময়লা-আবর্জনা ও বালুমাটি জমে ভরে গেছে। তাই ডাইং থেকে পানি ছাড়লেই সড়কে উপচে উঠছে। পানিতে ডুবে থাকা সড়ক দিয়ে যখন কোনো রিকশা কিংবা মোটরসাইকেল যায়, তখন রীতিমতো ঢেউ ওঠে। সড়কের এই দুরবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় অন্যান্য যান চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া যাঁরা হেঁটে চলাচল করেন, তাঁদের দুর্ভোগ আর ঝুঁকির শেষ নেই।
ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই স্কুল ফতুল্লার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় শুকনো মৌসুমেও ক্যামিকেল মিশ্রিত গরম পানির কারণে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীদের পা ও হাতে ঘা হচ্ছে। অনেকে এই পানির জন্য স্কুলেও আসতে চাইছে না। যার জন্য লেখাপড়ার খুব ক্ষতি হচ্ছে।
সড়কটির পাশে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্বে থাকা পরিবার কল্যাণ সহকারি রিজভী ফারহানা জানান, আমরাও যেমন ভুক্তভোগী হচ্ছি, সেবা প্রত্যাশীরাও একই ভাবে ভুক্তভোগী। পানি গুলো এতটাই দূষিত, যে এখানের বেশির ভাগ রোগীই আসছে চর্ম রোগ নিয়ে। এই কমিউনিটি ক্লিনিকে চর্ম রোগের বরাদ্দ ওষুধ ও মলমের চেয়েও রোগীর সংখ্যা বেশি।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন জানান, পানি গুলো বের হওয়ার ব্যবস্থা নেই। খাল দিয়ে পানি বের হওয়ার কথা থাকলেও এলাকা নিচু হওয়ায় সেখান দিয়ে উল্টো পানি আসে। আমরা এর প্রতিকারের জন্য কয়েকবার আবেদন করেছি, আশা করছি ডিএনডি প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে পানি বের হওয়ার একটি স্থান পাবে।